নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি ও তার ছেলে বাবুইকে গ্রেপ্তার করেছে ভাটারা থানা পুলিশ। সোমবার ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত মতিউর রহমান ও তার ছেলে বাবুইকে ঢাকার একটি আদালতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভাটারা থানার মামলায় মতি ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মতির বিরুদ্ধে ভাটারা থানাসহ বিভিন্ন থানায় ২৫টি ও তার ছেলের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাদের দুইজনকেই আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, ঢাকার ভাটারা থানা পুলিশ মতিউ রহমান মতি ও তার ছেলে বাবুইকে গ্রেপ্তার করেছে। মতি ও তার ছেলের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কয়টি মামলা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত বলতে পারব।
জানা যায়, মতিউর রহমান মতি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন পরপর দুইবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন এবং একবার প্যানেল মেয়র হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ২০২২ সালে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুদক কাউন্সিলর মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। দুই মামলায় মতিউর রহমান মতি ১৫ দিন জেল খেটে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার একাধিক মামলায় আসামি করা হয় মতিউর রহমান মতিকে। মতিউর রহমান মতি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট সহযোগী। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এলাকা থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যান মতি। মতিউর রহমান মতি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন আদমজী সুমিলপাড়ার আইলপাড়া এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে।
আরো জানা যায়, আলোচিত ৭ খুনের পর ২০১৪ সালের ১৪ মে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতির বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরপর দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন মতি। কয়েকমাস পরে এলাকায় ফিরে এসে সে দখল করে নেয় আদমজী ইপিজেডসহ নানা সেক্টর। বিগত সাড়ে ১৬ বছর মতিউর রহমান মতি, তার স্বজন ও সহযোগীদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিলো আদমজী ইপিজেডে। স্থানীয় সূত্রে জানায়, বিগত ১৬ বছর মতিউর রহমান মতি ও তার লোকজন আদমজী ইপিজডের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
২০০১ সালে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান বিদেশে। ২০০৭ সালের ১৩ মার্চ ইন্টারপোল মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে ইন্টারপোল ওয়ারেন্ট ইস্যু করে। ইন্টারপোল তাদের ওয়েব সাইটে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অংশ গ্রহনের অভিযোগ তুলে। ২০১১ সালে ওই ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দীর্ঘ আট বছর পলাতক থাকার ২০০৯ সালের জুনে দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পন করেন ওই সময়ের ইন্টারপোলের রেড ওয়ারেন্টভুক্ত নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও থানা যুবলীগের আহবায়ক মতিউর রহমান মতি। মতির বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তিনটি হত্যা সহ ২০টি ও বিভিন্ন মামলায় আরো ৭-৮টি মামলা ছিল। বেশীরভাগ মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। দীর্ঘ আট বছর ধরে মতি ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দুবাই পলাতক ছিলেন।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply